ঢাকা,শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৫তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ

president-zia_1অনলাইন ডেস্ক :

আজ ৩০ মে, বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুবই শোকাবহ দিন। ১৯৮১ সালের এই কালো রাতে চট্টগ্রামের অভিশপ্ত পুরনো সার্কিট হাউসে ঘুমন্ত অবস্থায় দেশি-বিদেশি ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের ক্রীড়নক কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেন বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’-এর কালজয়ী দর্শন ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, আধুনিক স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্থপতি এবং ইতিহাসের রাখাল রাজা খ্যাত দেশের প্রথম নির্বাচিত সফল প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম।

জিয়াউর রহমানের ৩৫তম শাহাদতবার্ষিকীর শোকাবহ এ দিনটি স্মরণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি পক্ষকালব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। প্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর অশ্রুসিক্ত নয়নে স্মরণ করবে দেশের কোটি কোটি মানুষ। এ উপলক্ষে শহীদ জিয়ার মাজার জিয়ারত, কোনআনখানি, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা, কালো পতাকা উত্তোলন ও দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণসহ ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো। : বাংলাদেশ ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এক সঙ্গে গাঁথা। ‘আমি যুগে আসি, আসিয়াছি পুনঃমহাবিপ্লব হেতু…’ আমাদের জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্রান্তিকালে বিদ্রোহী কবির ধূমকেতুর মতোই ত্রাতার ভূমিকায় জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব ঘটেছিল। তিনি একজন সৈনিক থেকে ক্রান্তিকালে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ, প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এবং সর্বোপরি একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে এদেশের সমৃদ্ধির প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। জিয়াউর রহমানের সততা ও দেশপ্রেম ছিল সকল প্রশ্নের ঊর্ধ্বে ও ঈর্ষণীয়। তার দেশপ্রেমের প্রকৃষ্ট উদাহরণই হলো ‘বাংলাদেশ’। তার সততা নিয়ে তার চরম শত্র“ও কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি।

একজন সাধারণ মেজর হয়েও ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়াল রাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের সময় প্রাণ বাঁচাতে অনেকে যখন পালিয়ে গিয়েছিল, এর বিপরীতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলে আজও দেশবাসীর হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন। : মহান এই দেশদরদী নেতা ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার নিভৃত পল্লী বাগবাড়ীর এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব ও কৈশোরে তিনি কমল নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর পিতা মনসুর রহমান সরকারি চাকরির জন্য প্রথমে কলকাতায় ও ’৪৭ সালে দেশ ভাগের পর চলে যান পাকিস্তানের করাচি শহরে। সেখানেই তিনি লেখাপড়া করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি কাকুলে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।

১৯৫৫ সালে তিনি কমিশন লাভ করেন। পাক-ভারত যুদ্ধে একটি কোম্পানির অধিনায়ক হিসেবে খেমকারান সেক্টরে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। বিশেষ কৃতিত্বের জন্য তিনি এই যুদ্ধে কোম্পানির সর্বোচ্চ খেতাব ও ১টি বিশেষ উপহার লাভ করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে হানাদার পাকবাহিনী মারণাস্ত্র নিয়ে মুজিব-ভুট্টো আলোচনারত অবস্থায় হঠাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে নিহত হয় হাজার হাজার মানুষ। শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতারের পর পাকিস্তান পাঠানো হয়। হানাদারদের অতর্কিত আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ। চট্টগ্রামে অবস্থানরত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান এ রাতেই ষোলশহরে সেনাবাহিনীর ৮ম ব্যাটালিয়নের সব বাংলাভাষী অফিসার ও জওয়ানকে ডেকে একত্র করে বিদ্রোহ করে স্বাধীনতার ডাক দেন। মেজর জিয়ার এই আহবানে গোটা অষ্টম ব্যাটালিয়নে ব্যাপক সাড়া দিয়ে সৈনিক ও অফিসাররা উল্লসিত হয়ে ওঠেন।

মেজর জিয়াউর রহমান পাকবাহিনীর আক্রমণে নিরস্ত্র জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানিয়ে ২৬ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জাতির উদ্দেশে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। মেজর জিয়ার কণ্ঠস্বর শুনে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে দিশেহারা গোটা জাতি। ‘আমি মেজর জিয়া বলছি…বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি’ তাঁর এই অবিস্মরণীয় অবিনাশী ঘোষণায় পথহারা মুক্তিকামী জনতা ঝাঁপিয়ে পড়ে মরণপণ মুক্তিযুদ্ধে। : জিয়াউর রহমান শুধু মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত হননি, তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত মেজর জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হলে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে কর্নেল এমএজি ওসমানীকে এ দায়িত্ব অর্পণ করার পর তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রথমদিকে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর বৃহত্তর এলাকায় বীরত্বের সঙ্গে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় তিনি চৌকস জেড ফোর্স গঠন ও পরিচালনা করেন। বীরত্বের সঙ্গে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর আবার ফিরে যান ক্যান্টনমেন্টে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী খোন্দকার মুশতাক আহমাদ ক্ষমতা দখল করে প্রেসিডেন্ট হলে সেনাবাহিনীসহ গোটা জাতির ভাগ্যোন্নয়নে তখন বিরাজ করছিল চরম অনিশ্চয়তা।

এরই মধ্যে খোন্দকার মুশতাককে পাল্টা আরেক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত করে আধিপত্যবাদের ক্রীড়নকরা ক্ষমতা দখল করে। সে সময় কিংকর্তব্যবিমূঢ় নেতৃত্বশূন্য জাতিকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য জিয়াউর রহমানকে দায়িত্ব দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয় সৈনিক-জনতা। দেশের নেতৃত্ব গ্রহণের পর জিয়াউর রহমান অল্প সময়ের মধ্যেই তলাবিহীন ঝুড়ির বদনামমুক্ত করে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেন। তিনি একদলীয় শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে দেশে বাকব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের কালজয়ী দর্শনের প্রবক্তা জিয়া জাতির নিজস্ব পরিচয় তুলে ধরেন। তার অন্যতম উপহার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। তার সুশাসনে উদীয়মান এক অমিত সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় আসন লাভ করে। জিয়াউর রহমান ছিলেন সমৃদ্ধ এবং উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও পথপ্রদর্শক। তিনি বাংলাদেশকে অধিকতর সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে দেশের সম্ভাবনার প্রতিটি দিককে উন্মোচনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত সততা, পরিশ্রমপ্রিয়তা, কর্তব্যনিষ্ঠা, নেতৃত্বের দৃঢ়তা, নির্লোভ, নির্মোহ ও গভীর দেশপ্রেমসহ বহু সৎ গুণাবলী দিয়ে তিনি জাতির সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এক নতুন জাগরণ সৃষ্টি করেন। স্বেচ্ছাশ্রমে খাল খনন, রাস্তাঘাট নির্মাণ ইত্যাদি দেশগড়া কর্মসূচির মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যেই জনগণের নয়নের মণি হয়ে ওঠেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তাঁর বলিষ্ঠ, গতিশীল ও পরিকল্পিত নেতৃত্বে দেশ সত্যিকার উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছিল।

কিছুদিনের মধ্যেই দেশবাসীর প্রাণপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় ঠাঁই করে নেন। মুসলিম বিশ্বে, জোটনিরপেক্ষ বলয়ে ও পাশ্চাত্যে তেজোদীপ্ত ও প্রজ্ঞাবান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ভূমিকা পালনে, সার্কের সফল স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে শহীদ জিয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের অগ্রভাগে এনে দিয়েছিলেন। জিয়ার ঈর্ষণীয় এই জনপ্রিয়তা ও দেশপ্রেমই তার জন্য কাল হয়েছিল। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা চট্টগ্রামে তাঁকে হত্যা করলেও তাঁর আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানের শাহাদতে গোটা পৃথিবী শোকাভিভূত হয়ে পড়েছিল। এ শোকের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল শেরেবাংলানগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জানাজায়। লাখো লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সেদিন জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। : প্রেসিডেন্ট জিয়া খালকাটা কর্মসূচি, সবুজ বিপ্লব, শিল্প উন্নয়ন এবং যুগোপযোগী ও আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে স্বনির্ভর বাংলাদেশের ভিত রচনা করেন। নারী সমাজের উন্নয়ন ও শিশুদের বিকাশে তার আগ্রহ জাতিকে নতুন দিক-নির্দেশনা দেয়। তার সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেম ছিল অতুলনীয়।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৫তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বাণীতে জাতীয় জীবনের চলমান সংকটে শহীদ জিয়ার প্রদর্শিত পথ ও আদর্শ বুকে ধারণ করেই সামনে এগিয়ে যেতে এবং জাতীয় স্বার্থ, বহুমাত্রিক গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষায় ইস্পাতকঠিন গণঐক্য গড়ে তুলতে আহবান জানান। গতকাল এক বাণীতে তিনি “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির স্থপতি, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ কালজয়ী দর্শনের প্রবর্তক, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, সফল রাষ্ট্রনায়ক, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৫তম শাহাদতবার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত করে বলেন, শহীদ জিয়ার অম্লান আদর্শ, দর্শন ও কর্মসূচি আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষা, বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং দেশীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির নিশ্চয়তা।”

মির্জা ফখরুল বাণীতে বলেন, জীবিতকালে জাতির চরম দুঃসময়গুলোতে জিয়াউর রহমান দেশ ও জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। মহান স্বাধীনতার বীরোচিত ঘোষণা, স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা এবং রাষ্ট্র গঠনে তাঁর অনন্য কৃতিত্বের কথা আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। ’৭১ সালে সারা জাতি যখন স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত, যখন রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তহীনতায় দেশের মানুষ দিশেহারা ঠিক সেই মুহূর্তে ২৬ মার্চ মেজর জিয়ার কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে স্বাধীনতার ঘোষণা সারা জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের অভয়মন্ত্রে উজ্জীবিত করে, ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এদেশ হানাদারমুক্ত হয়ে স্বাধীন দেশের মাটিতে বাংলাদেশের পতাকা উড্ডীন হয়। কিন্তু স্বাধীনতা-উত্তর তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের দমনমূলক শাসন-শোষণের যাঁতাকলে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠে, দেশের মানুষের একের পর এক গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়, দেশ একদলীয় সামন্ততান্ত্রিক শাসনের নিষ্ঠুর কবলে পড়ে পিষ্ট হতে থাকে। গণতন্ত্র হত্যা ও অরাজকতার অমানিশার দুর্যোগের মুখে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশের সিপাহি-জনতার মিলিত শক্তির মিছিলে জিয়াউর রহমান জাতীয় রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রকে অর্গলমুক্ত করেন এবং সংবাদপত্র ও নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। তিনি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা করেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই মহান জাতীয়তাবাদী নেতার জনপ্রিয়তা দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারী শক্তি কখনোই মেনে নিতে পারেনি। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই অশুভ চক্র তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এই চক্রান্তকারীরা ১৯৮১ সালের ৩০ মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে। এই মর্মান্তিক ঘটনার মধ্য দিয়ে একজন মহান দেশপ্রেমিককে দেশবাসী হারায়। তবে চক্রান্তকারীরা যতই চেষ্টা করুক কোনো ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ককে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলেই তিনি বিস্মৃত হন না বরং নিজ দেশের জনগণের হৃদয়ে চিরজাগরুক হয়ে অবস্থান করেন। তিনি সারাজীবন আদর্শকে বুকে ধারণ করে নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে গেছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার সর্বক্ষেত্রে একচেটিয়াত্ত প্রতিষ্ঠিত করেছে। কেন্দ্রীভূত স্বৈরতন্ত্রের প্রতিভূ বর্তমান সরকার। এরা নতুন কায়দায় পুরনো বাকশালকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। বিরোধী দলের অধিকার, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভূলুন্ঠিত করে গণতন্ত্রকে দেশছাড়া করেছে। জনমনে ভয় আর আতঙ্ক সৃষ্টি করে তারা দেশ চালাচ্ছে। এমতাবস্থায় হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সকল গণতন্ত্রমনা মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আপসহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আবারও বহুদলীয় গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। জাতীয় জীবনের চলমান সংকটে শহীদ জিয়ার প্রদর্শিত পথ ও আদর্শ বুকে ধারণ করেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থ, বহুমাত্রিক গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষায় ইস্পাতকঠিন গণঐক্য গড়ে তুলতে হবে। : রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা, নির্ভিক নির্মোহ রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়ার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী শক্তির ক্রমাগত বিদ্বেষপূর্ণ আক্রমণের পটভূমিতে তাঁর অম্লান স্মৃতিকে বুকে ধারণ করে এবার ৩০ মে মহান নেতার শাহাদতবার্ষিকী সর্বস্তরে ব্যাপকভাবে যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের জন্য দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সকল স্তরের জনগণের প্রতি তিনি উদাত্ত আহবান জানান।

বিএনপির কর্মসূচি : আজ ৩০ মে, সোমবার মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তমের ৩৫তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল ৬টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। একইভাবে সারাদেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে শাহাদতবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করা হবে। ৩০ মে সকাল ১০টায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তমের শেরেবাংলানগরস্থ মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের উদ্যোগে মাজারে কোরআনখানি ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) উদ্যোগে মাজার প্রাঙ্গণে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

সকাল ৯টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ড্যাবের উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান ও ওষুধ বিতরণ করা হবে। উদ্বোধন করবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সকাল ১০টায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ। সকাল সাড়ে ১০টায় শহীদ জিয়ার মাজার প্রাঙ্গণে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি। উদ্বোধন করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

বাদ জোহর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রীয় মসজিদে ‘শহীদ জিয়াউর রহমানের রূহের মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।’ : এ উপলক্ষে আজ সোমবার সকাল ১০টায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ দলের সিনিয়র নেতারা জিয়াউর রহমানের মাজারে দোয়া ও ফুলেল শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর প্রথমে তিনি মোহাম্মদপুর টাউন হলের সামনে থেকে খাবার বিতরণ শুরু করবেন। : এদিকে রাজধানীতে খাবার বিতরণকালে বেগম খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা নিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছে অনুমতি চেয়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপি।

রাজধানীতে দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণের ৬২ স্পট হলোÑ মোহাম্মদপুর টাউন হল, আদাবর থানা, সুগন্ধা কমিউনিটি সেন্টার (মেডিনোভার সামনে), আজিমপুর বটতলা, জাতীয় প্রেসক্লাব (ছাত্রদল), আল-হাবিব কমিউনিটি সেন্টারের সামনে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে (জাসাস ও মুক্তিযোদ্ধা দল), পল্টন কমিউনিটি সেন্টারের সামনে (স্বেচ্ছাসেবক দল), মতিঝিল কলোনি কমিউনিটি সেন্টার (আইডিয়াল স্কুলের বিপরীত পাশে), মাহবুব আলী মিলনায়তন (রেলওয়ে শ্রমিক দল), মির্জা আব্বাসের বাড়ির সামনে, শান্তিনগর বাজার (পল্টন বিএনপি), খিলগাঁও চৌরাস্তা (জোড়পুকুর খেলার মাঠ), দয়াগঞ্জ মোড় (তিন রাস্তার মোড় যাত্রাবাড়ী, আলম মার্কেট (জুরাইন), শ্যামপুর ঈদগা মাঠ (লাল মসজিদ), যাত্রাবাড়ী শহীদ ফারুক সড়ক, পোস্তগোলা (বটতলা) শ্যামপুর, ধোলাইপাড় বাসস্ট্যান্ড, ডেমরা থানা বিএনপি, বাংলামটর (হাতিরপুল) কলাবাগান থানা বিএনপি, কলাবাগান বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ১ম লেনের সামনে, সূত্রাপুর কমিউনিটি সেন্টার নতুন রাস্তা, নবাবপুর রোড-মদনপাল লেন মোড়, পোস্তামোড় (লালবাগ যুবদল), কোতোয়ালি থানা যুবদলের কার্যালয়ের সামনে (নর্থ সাউর্থ রোড), নয়াবাজার বিএনপি অফিস (বংশাল থানা), কাঠেরপুল গেন্ডারিয়া মোড় (ছাত্রদল দক্ষিণ), আজিমপুর ভিকারুন্নেছা নুন স্কুল সংলগ্ন, লালবাগ হাফেজ মুছা ব্রিজ, মৌলভীবাজার কমিউনিটি সেন্টার-চকবাজার, ঢাকা ট্যানারি মোড় (হাজারীবাগ), ঢাকেশ্বরী বালুর মাঠ, সাত মসজিদ রোড (ঈদগা রোডের পশ্চিম পাশে), গাউসিয়া চাঁদনী চকের গেট (নিউমার্কেট), মালিবাগ ডিআইটি রোড (ফরচুন মার্কেট সংলগ্ন), আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ, নয়াপল্টনে হোটেল ভিক্টোরিয়ার সামনে (তৃণমূল দল), খিলক্ষেত নিকুঞ্জ (রিজেন্সি হোটেলের পেছনে বটতলা), আমির কমপ্লেক্স (আজমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন), অনিক প্লাজার সামনে (পল্লবী), পল্লবী ১২নং বাসস্ট্যান্ড, ন্যাশনাল বাংলা স্কুল (মিরপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন), শাহআলী মাজার (মিরপুর), বুদ্ধিজীবী শহীদ মিনার গেট, শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড (রোকেয়া সরণি, মহাখালী ওয়ারলেস গেট, টিএন্ডটি মাঠের সামনে (মানিক মিয়া এভিনিউ), মোল্লাপাড়া (মধ্যবাড্ডা), আল-আমিন সুপার মার্কেট (রামপুরা), বিশাল সেন্টার (মগবাজার), বালু নদীর পাড় (খিলক্ষেত থানা ৩০০ ফুট রাস্তা পূর্বাঞ্চল), কাওরানবাজার প্রগতি টাওয়ারের সামনে, সাত রাস্তার মোড়/নাবিস্কো মোড়, শাহ আলী মাজার গেট সংলগ্ন (বাউল দল)।

  • দিনকাল

পাঠকের মতামত: